সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কর্মসংস্থান কোটার সংখ্যা অবশ্যই কমানো উচিত বল্লেন জোবাইদা নাসরীন


১৪ মার্চ ২০১৮, ১২:২৯ |
সরকারি চাকরিতে যোগদানের সর্বোচ্চ বয়সসীমা
বাড়ানোর দাবির পাশাপাশি সরকারি চাকরিসহ বিভিন্ন
ক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন
চলছে।
কোটা সংস্কারের পাঁচ দফা দাবিতে আজ ১৪
মার্চ সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের
সামনে ও ঢাকায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে
মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
 এই পাঁচ দফা দাবির
মধ্যে রয়েছে কোটা ৫৬ থেকে কমিয়ে ১০
শতাংশে নামানো, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া
গেলে ওই সব পদে মেধাভিত্তিক নিয়োগ
দেওয়া, কোটায় বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না
নেওয়া, অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করা, কোটা-সুবিধা
একাধিকবার ব্যবহার না করা। দাবিগুলো যৌক্তিক এবং
সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।


বাংলাদেশে সরকারি চাকরি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ নানা
জায়গায় কোটাব্যবস্থা প্রচলিত আছে ৷
 এই
কোটাব্যবস্থার পেছনের কারণ হলো অনগ্রসর
শ্রেণি বা অঞ্চলকে সামনে নিয়ে আসা। তাঁদের
বাড়তি সুবিধা দিয়ে সমতাবিধানের লক্ষ্যে কোটার
প্রবর্তন করা হয় স্বাধীনতার পরেই ৷
যেহেতু
নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী-এরা সামাজিক কারণেই
পিছিয়ে আছে, তাই তাদের এগিয়ে আনার জন্যই
তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করা হয়।
এখনো
কোটার জন্য আন্দোলন করছে বিভিন্ন অনগ্রসর
জনগোষ্ঠী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা।
এদের বাদেই কিন্তু মোট কোটার পরিমাণ ৫৫
শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ১
দশমিক ১০ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ;
১ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য ১
শতাংশ; ১৩ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা পোষ্যদের জন্য ৩০
শতাংশ; নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছাড়াও জেলা
কোটায় ১০ শতাংশ নিয়োগ হয়। এই হিসাবে মোট
প্রায় ৫৬ শতাংশ নিয়োগ হচ্ছে কোটার মাধ্যমে।
অর্থাৎ সরকারি চাকরির অর্ধেকেরও বেশি কোটার
দখলে, মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাচ্ছে
অর্ধেকেরও কম, ৪৪ শতাংশ ৷
আন্দোলনকারীদের মতে, প্রতি বিসিএস
পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণ ক্যাডারে গড়ে ৫০০ জন
কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ
নেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, কোটা পদ্ধতির
কারণে কেউ যদি সাড়ে তিন লাখ পরীক্ষার্থীর
মধ্যে ২২৬ তম হন, তাহলে তিনি চাকরি না-ও পেতে
পারেন। কারণ, ৫০০ পদের মধ্যে মেধা কোটায়
২২৫ জন চাকরি পাবেন। অন্যদিকে কোটার কারণে
কেউ ৭ হাজারতম হয়েও চাকরি পেতে পারেন।
কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ২৮ থেকে ৩৫
তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে ৫ হাজার পদ শূন্য
রয়ে গেছে। তবে কিছুটা নড়াচড়া ইতিমধ্যে শুরু
হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা
এসেছে যে কোটার আসন পূরণ না হলে মেধার
শীর্ষে থাকাদের থেকে পূরণ করা হবে।
আন্দোলনকারীরা যুক্তি পাড়ছেন, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ
করেছেন তাঁরা জাতির বীর সন্তান। তাঁদের মধ্যে
যাঁরা সনদধারী, তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি
পাবেন। কিন্তু বয়স বিবেচনায় এখন আর এই
মুক্তিযোদ্ধাদের কেউই চাকরিপ্রার্থী নন। তবে
চাকরিরতরা বাড়তি এক বছর চাকরি করতে পারছেন এবং
তাঁরা রাষ্ট্রীয় নানা সুযোগ-সুবিধা পান।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দকৃত
কোটা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন না
আন্দোলনকারীরা। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-
নাতনির জন্য কোটার বিপক্ষে তাঁদের অবস্থান।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহারেও রয়েছে বৈষম্য। জানা
গেছে, বীরাঙ্গনাদের সন্তানেরা
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটার সুবিধা
ব্যবহার করতে পারছেন না, যদিও বীরাঙ্গনারা
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
কারণ, বীরাঙ্গনাদের বেশির ভাগেরই সনদ নেই।
মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার
পর অনেকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিতে তৎপর
হয়ে ওঠেন এবং অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ
না করেই মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে নেন।
এই কোটা পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো আমরা
কোটা বিষয়ে কোনো পুনর্মূল্যায়ন করি না।
যেমন, এই কোটাব্যবস্থার কারণে সমতার জায়গাটি
প্রতিবছর কতটুকু এগোল, সে বিষয়ে কোনো
ধরনের গবেষণালব্ধ পরিসংখ্যান আমাদের কাছে
নেই। সে কারণে আমরা এটাও জানি না যে কোটার
কারণে সেই অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর
আর্থসামাজিক অবস্থা কতটুকু বাড়ল। এর ফলে
কোটাব্যবস্থা প্রণয়নের মূল লক্ষ্য স্থির থাকছে
না। কোটা আসলে কাদের দরকার, কতটুকু দরকার, এ
বছর এত শতাংশ কোটায় একটা অনগ্রসর
জনগোষ্ঠী কতটুকু এগোবে এবং এর পরের
বছর কতটুকু কোটা থাকবে, সেই বিষয়গুলো যদি
বিশ্লেষণ করা যেত, তাহলে এ ধরনের সংকট
কাটানো যায় বলে মনে হয়। নারী কোটার
ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য হওয়া উচিত।
কোন অঞ্চলের নারীরা পিছিয়ে আছেন,
তাঁদের কতটুকু কোটা দরকার, সেটি আগে নির্ধারণ
করতে হবে। ঢালাওভাবে সবার ক্ষেত্রে কোটার
প্রয়োজন নেই। তাই অন্তত তিন বছর পরপর
কোটাব্যবস্থার মূল্যায়ন প্রয়োজন হয়ে
পড়েছে, যা কোটা পদ্ধতি সংস্কারে বড় ভূমিকা
রাখবে।
যদি এমন নিয়ম করা হয় যে কোটার সুবিধা একজন
ব্যক্তি জীবনে একবারই ব্যবহার করতে পারবেন,
তাহলে মনে হয় কোটার সঠিক ব্যবহার হবে। ধরা
যাক, যিনি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা অন্য কোথাও কোটার
ভিত্তিতে সুযোগ পেয়েছেন, তিনি চাকরির
ক্ষেত্রে আর সেটি পাবেন না। সেখানে যাঁরা এই
সুযোগ আগে ব্যবহার করেননি তাঁরা পাবেন।
তাহলে কোটার সুযোগ সবাই কম-বেশি ব্যবহার
করতে পারবেন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য
কোটা দরকার। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার
সন্তানদের জন্য কোটা ঠিক আছে, কিন্তু তারও
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কোটা রাখা জরুরি কি না,
সেটি সরকার পুনর্বিবেচনা করতে পারে। আরেকটি
বিষয় এখানে বলা প্রয়োজন যে আমরা শুধু
বিসিএসে কোটা বিষয়ে বলছি। তৃতীয় ও চতুর্থ
শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই
কোটাব্যবস্থার দাপটে অনেক যোগ্য প্রার্থী
ঢুকতে পারছেন না। সেখানে রয়েছে পোষ্য
কোটা। বর্তমানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই
পদগুলো মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও পোষ্য কোটার
দখলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চতুর্থ শ্রেণির
কর্মচারীদের প্রায় ৯০ শতাংশ পোষ্য কোটার
দখলে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির
ক্ষেত্রেও পোষ্য কোটার দাপট। সেখানে শুধু
পাস নম্বর পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,
কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানেরা ভর্তির সুযোগ
পান। এ ক্ষেত্রেও মনে হয় কিছুটা লাগাম টানা
প্রয়োজন। কেননা, মা-বাবা-মায়ের চাকরির
যোগ্যতায় কেউ বাড়তি সুযোগ পাবেন, সেটা কাম্য
নয়।
কোটার প্রয়োজন নিশ্চিতভাবেই আছে, তবে
সেটি যেন যৌক্তিক বিবেচনায় হয়, একবারই যেন এই
সুযোগ ব্যবহার করা হয় প্রকৃতই অনগ্রসর
জনগোষ্ঠী কিংবা অনগ্রসর এলাকার জন্য, সে
বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি।
জোবাইদা নাসরীন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান
বিভাগের শিক্ষক
zobaidanasreen@gmail.com
আরও সংবাদ.........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ফেসবুকেও নাই e বুকেও নাই।। exclusive dancing boys & girls music video

এক যোগেরও বেশি সময় পরে সাদ্দামের লাস তাজাই পাওয়া গেল

কবর থেকে উঠানো হলো সাদ্দাম হোসেনের লাশ। এতবছর পর একটুও বিকৃত হইনি।  সুবহানআল্লাহ  জালিমের ফাঁসিকাষ্ঠে নিহত ইরাকের প্রেসিডেন্ট লৌহমানব সাদ্দাম হোসেনের কবর পরিবর্তন করতে গিয়ে কবর থেকে উঠানোর পর দেখা গেল সাদ্দাম হোসাইনের দেহ সেই তাজাই রয়ে গেছে। শরীরের কোন অংশে কোন রকম পচন ধরে নাই। সুবহানআল্লাহ। শহীদদের দেহ কোন পোকা-মাকড় খেতে পারেনা।  এবং পচনও ধরে না। সাদ্দাম হোসেনের কবর উড়িয়ে দিল ইরাকি বাহিনী; লাশ গায়েব। ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের কবরে ইরাকি সেনাবাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে তা গুড়িয়ে দিয়েছে। খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না লাশও। ফ্রান্স ভিত্তিক একটি সংবাদ সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী ইরাকের তুকরিত শহরের আল ওয়াজা এলাকায় অবস্থিত সাদ্দাম হোসেনের কবরের ওপর বোমা হামলা হওয়ায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েগেছে। সাদ্দাম হোসেনের গোত্র আবু নসরের প্রধান শায়খ মানাফ আলী আন্ নাদা জানিয়েছেন, সাদ্দাম হোসেনের কবরের ছাদের ওপর কথিত সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় ইরাকের বিমান বাহিনী।  এতে কবরস্থানটি ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। এমনকি সেখানে সাদ্দাম হোসেনের লাশ...

পুরাতন ৩৪টাকা নতুন ৯ টাকায় ১জিবি gp new offer today +9month +9gb unlimited use Internet

সম্মানিত গ্রাহক, gp তে ১ বছরের নতুন সংযোগ কারিরা পাচ্ছেন 34 টাকা রিচার্জ, গ্রাহকরা গ্রামীণফোন নাম্বারে, 0.5 টাকায় / দ্বিতীয় কল রেট এবং 1 টা শব্দ / + দ্বিতীয় কোন স্থানীয় সংখ্যার 30 দিন ধরে ২4 ঘণ্টা উপভোগ করতে পারবেন।  আরো পাশাপাশি, গ্রাহকরা 1 গিগাবাইট ইন্টারনেট পাবেন 7 দিন  +1 মিনিট 15 দিনের জন্য কোনও নেট এসএমএস। বিশেষ ট্যারিফের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, গ্রাহকরা মূল প্যাকেজ কল রেট উপভোগ করতে সক্ষম হবেন। বিশেষ নিম্ন ট্যারিফ উপভোগ করার সময়, অন্য নিম্ন ট্যারিফ অফার প্রযোজ্য হবে না।  বোনাস পরিমাণ, বোনাস মিনিট বা ইমারজেন্সি ব্যালেন্সের উপর কম ট্যারিফ প্রযোজ্য নয় এবং এটি প্রথমটি ব্যবহার করবেন। বোনাস ও বৈধতা পরীক্ষা করতে,  ডায়াল করুন * 121 * 1 * 2 # প্রথম রিচার্জ অফার শুধুমাত্র প্রথমবারের জন্য প্রযোজ্য, যার ফলে গ্রাহকের জন্য 34 রিচার্জ অফার প্রযোজ্য হবে না।  প্রচারাভিযানের সময়, উল্লেখযোগ্য রিচার্জ পয়েন্ট (9 টাকা বা 34 টাকা) যোগ্য নতুন গ্রাহকদের জন্য প্রযোজ্য এবং অন্যান্য সকল গ্রাহকদের জন্য সীমিত থাকবে।  আরো ৯ টাকা রিচার্জ পয়েন্...